পবিত্র শবে বরাতের ফজিলত ও হালুয়া রুটি খাওয়ার হুকুম
শবে বরাত (আরবি: ليلة البتة, প্রতিবর্ণী. লাইলাতে বরাত) বা মধ্য-শা'বান (আরবি: نصف شعبان, প্রতিবর্ণী. Niṣf Sha‘bān) হচ্ছে হিজরী শা'বান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখের মধ্যে পালিত মুসলিমদের একটি পূণ্যময় রাত। এই রাতকে লাইলাতে বরাত বলা হয়। ইসলামী বিশ্বাস মতে, এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদেরকে বিশেষভাবে ক্ষমা করেন। এছাড়া এ রাতে আল্লাহ আগামী বছরের জন্য তার বান্দাদের ভাগ্য নির্ধারণ করেন বলে বাংলাদেশে মনে করা হয়। তবে কুরআনে রয়েছে যে, শবে কদরে পরবর্তী বছরের জন্য ভাগ্য নির্ধারিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের অনেক মুসলমান ইবাদাতের মাধ্যমে শবে বরাত রাত পালন করেন।
শবে বরাতের ফজিলত
হজরত আয়িশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন; আমি তখন উঠে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়িশা! তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে? আমি উত্তরে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না? নবীজি (সা.) বললেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন। তখন নবীজি (সা.) বললেন, এটা হলো অর্ধশাবানের রাত; এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন; ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন। (শুআবুল ইমান, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৮২)।
হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। তিনি আরও বলেন, নবীজি (সা.) তাঁকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া বকরির পশমের (সংখ্যার পরিমাণের) চেয়েও বেশিসংখ্যক গুণাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ৭৩৯)।
শবে বরাতের রাতে যে সকল লোকের আমল কবুল হয় না বলে বর্ণিত হয়েছে, এমন লোকের সংখ্যা প্রায় এগার
- এক. মুশরিক অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে যে কোন প্রকারের শিরকে লিপ্ত হয়
- দুই. যে ব্যক্তি কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী
- তিন. আত্মহত্যার ইচ্ছা পোষণকারী
- চার. যে ব্যক্তি অপরের ভাল দেখতে পারে না অর্থাৎ পরশ্রীকাতরতায় লিপ্ত
- পাঁচ. যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে, চাই তা নিকটতম আত্মীয় হোক বা দূরবর্তী আত্মীয় হোক
- ছয়. যে ব্যক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়
- সাত. যে ব্যক্তি মদ্যপানকারী অর্থাৎ নেশাকারী
- আট. যে ব্যক্তি গণকগিরি করে বা গণকের কাছে গমণ করে
- নয়. যে ব্যক্তি জুয়া খেলে
- দশ. যে ব্যক্তি মাতা-পিতার অবাধ্য হয়
- এগার. টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী পুরুষ ইত্যাদি ব্যক্তির দুআও তওবা না করা পর্যন্ত কবুল হয় না।
তাই শবে বরাতের পূর্ণ ফযীলত ও শবে বরাতের রাতে দুআ কবুল হওয়ার জন্য উল্লেখিত কবীরা গুনাহ সমূহ থেকে খাঁটি দিলে তওবা করা উচিত। অন্যথায় সারারাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করেও কোন লাভের আশা করা যায় না।
শবে বরাতের আমল বা করনীয় সম্পর্কে যা জানা যায় তা হল
- এক. এই রাতে কবর যিয়ারত করা যেতে পারে, তবে তা অবশ্যই দলবদ্ধ ও আড়ম্বরপূর্ণ না হয়ে একাকী হওয়া উচিত
- দুই. শবে বরাতের রাত্রিতে নামায-দুআ, কুরআন তিলাওয়াত, যিকির-আযকার, দরূদ শরীফ ইত্যাদিতে লিপ্ত থাকা ভাল
- তিন. এই রাত্রিতে দীর্ঘ সিজদায় রত হওয়া উচিত
- চার. শবে বরাতের পরের দিন অর্থাৎ ১৫ই শাবান রোযা রাখা।
তবে শবে বরাত কে উসিলা করে হালুয়া রুটি খাওয়া সম্পর্কে ইসলামে এমন কোন হুকুম নেই। অনেকেই অনেক সওয়াবের কাজ মনে করে খেয়ে থাকেন এতে কোন ফায়দা হবে না। হালুয়া রুটি খাওয়ার কোরান হাদিস থেকে কোন দলিল নাই বিদাই তা পরিহার করতে হবে।
মহান আল্লাহ আমাদের ইসলামকে বুজে আল্লাহর ও তার রাসুলের হুকুম মানার তওফিক দান করুন আমিন।
No comments:
Post a Comment